ভারতীয় সিনেমা জগতে প্রথমবারের মতো এত
বড় বাজেটের অ্যানিমেটেড মহাকাব্যিক সিনেমা এসেছে “মহাবতার নরসিংহ” (Mahavatar
Narsimha)। অশ্বিন কুমারের পরিচালনায় এবং হোম্বলে ফিল্মসের প্রযোজনায় নির্মিত
এই সিনেমাটি দর্শকদের সামনে তুলে ধরেছে ভগবান বিষ্ণুর মহিমা, তাঁর অবতার বরাহ ও নরসিংহের
চমকপ্রদ কাহিনি। ২০২৪ সালের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শনের পর থেকে এই সিনেমাটি
দর্শক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এবং ২০২৫ সালে মুক্তির পর এটি ভারতের সর্বাধিক আয়কারী
অ্যানিমেটেড ফিল্মে পরিণত হয়।
কাহিনি
সংক্ষেপ:
ঋষি কশ্যপ তাঁর সন্ধ্যার প্রার্থনায় ব্যস্ত
ছিলেন, তখনই তাঁর স্ত্রী দিতি সন্তান লাভের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কশ্যপ অশুভ সময়ে এ কাজের
বিরোধিতা করলেও দিতির অনুরোধে সম্মতি দেন। এর ফলে জন্ম নেয় দুই অসুর ভাই—হিরণ্যক ও হিরণ্যকশিপু,
যারা বিশ্বজগতের উপর দখল প্রতিষ্ঠা করতে সংকল্পবদ্ধ হয়।
হিরণ্যক ভূদেবীকে অপহরণ করে গর্ভোধক সমুদ্রে
বন্দী করলে বিশ্ব বিশৃঙ্খলায় পতিত হয়। ভগবান বিষ্ণু অবতার গ্রহণ করেন বরাহ রূপে—এক বিশাল শূকররূপী
দেহ নিয়ে তিনি হিরণ্যকের বিরুদ্ধে মহাযুদ্ধে অবতীর্ণ হন এবং ভূদেবীকে উদ্ধার করেন।
ভয়ঙ্কর সংঘর্ষ শেষে বিষ্ণু হিরণ্যককে বধ করেন।
প্রিয় ভাইয়ের মৃত্যুতে হিরণ্যকশিপু প্রতিশোধের
তাড়নায় হিমালয়ে তপস্যা শুরু করেন। তাঁর কঠিন তপস্যায় ব্রহ্মা বর দেন—কোনও দেবতা, মানুষ,
পশু, অস্ত্র বা প্রকৃতির নিয়ম তাকে হত্যা করতে পারবে না। এই বর পেয়ে হিরণ্যকশিপু নিজেকে
বিশ্বের ঈশ্বর বলে ঘোষণা করেন এবং দেবতা ও ভক্তদের উপর ভয়ঙ্কর অত্যাচার চালান।
আরো দেখুন:
কুলি মুভি ডাউনলোড – Coolie Movie Download (2025)
কিন্তু ভাগ্যের লিখন অন্যরকম। হিরণ্যকশিপুর
স্ত্রী কায়াধুর গর্ভে জন্ম নেয় এক শিশুপুত্র—প্রহ্লাদ। ঋষি
নারদের শিক্ষায় প্রহ্লাদ ভগবান বিষ্ণুর ভক্ত হয়ে ওঠে। পিতার হুমকি, শাস্তি ও মৃত্যুর
ভয় উপেক্ষা করে সে অটল বিশ্বাসে ভগবান বিষ্ণুর নাম জপ করতে থাকে। প্রহ্লাদের বিশ্বাস
দেখে হিরণ্যকশিপু ক্রোধান্ধ হয়ে ওঠেন এবং তাকে হত্যার জন্য বারবার চেষ্টা করেন—পাগল হাতি, পাহাড়
থেকে ফেলে দেওয়া, আগুনে পোড়ানো—কিছুই প্রহ্লাদকে ধ্বংস করতে পারেনি।
অবশেষে, একদিন হিরণ্যকশিপু ব্যঙ্গ করে
জিজ্ঞাসা করেন—“তোর ঈশ্বর কি এই স্তম্ভে আছেন?” প্রহ্লাদ দৃঢ়ভাবে
উত্তর দেয়—“হ্যাঁ, তিনি আছেন।” ক্রুদ্ধ হয়ে
হিরণ্যকশিপু স্তম্ভে আঘাত করলে সেখান থেকেই আবির্ভূত হন ভগবান বিষ্ণুর ভয়ঙ্কর অবতার
নরসিংহ—অর্ধেক মানুষ,
অর্ধেক সিংহ।
নরসিংহ হিরণ্যকশিপুকে এমনভাবে বধ করেন
যা ব্রহ্মার বরকে ভঙ্গ করেনি—
·
গোধূলি লগ্নে (দিনও নয়, রাতও নয়)
·
প্রাসাদের দ্বারপ্রান্তে (ঘরের ভেতরও নয়, বাইরে
নয়)
·
তাঁর কোলের উপর (আকাশও নয়, মাটিও নয়)
·
নখর দিয়ে (অস্ত্রও নয়, খালি হাতও নয়)।
এইভাবে দেবতার
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়। দেবতা, ঋষি ও ভক্তরা নরসিংহকে শান্ত করার জন্য প্রহ্লাদের
অনুরোধ করেন। প্রহ্লাদের অটল ভক্তি দেখে নরসিংহ শান্ত হন এবং তাকে আশীর্বাদ করেন।